কবিতা 

মৌলিক মজুমদারের সাতটি কবিতা

বেত্রবতী শুয়ে আছে সিনেমার মতো

 

তারপর ঘেঁটে দেখলাম কোনো চিহ্ন নেই

চেঁছে তুলে নিয়ে গেছে কবচ কুন্ডল

জেগেছে শরীরব্রহ্ম উপত্যকাময়

আশীর্বাদী ফুল তুমি অশেষে দিয়েছ।

 

জোড়া ডানা পিঠে নিয়ে আমি বীতশোক

অনেক উড়েছি প্রেমে সূর্যের কন্দরে

চাকা বসে যাওয়াটাই যুগধর্ম নয়

সময় সারাতে পারে যাপনের ক্ষত।

 

বেত্রবতী শুয়ে আছে সিনেমার মতো

শুক্রতারাটির মতো জ্বলে আছে রাতে

ডানায় কি এত জোর পাবো কোনোদিনও

ঝাপটাই যত ডানা পরাভব প্রিয়!

 

প্রেম ছাড়া চোখ নেই অয়ি চক্ষুষ্মতী

চোখ ভরে দেখি শুধু নদী মরে গেছে

শুঁড়িখানা খুলে গেলে ডানা ঝরে যায়

বেত্রবতী শুয়ে থাকে সিনেমার মতো …

 

 

সহযোদ্ধার প্রতি

 

এই যে দীঘল পা ফেলে চলে যাও শুধু

জ্যোৎস্নাবসত ছেড়ে,

ঝুঁকে আসে তোমার কাঁধের মাংসপেশী।

উরুতে ক্ষত নিয়ে চলে যাও,

পড়ে থাকে রক্তের দাগ

তাজা ও নোনা।

 

পৃথিবীতে আরো কাজ আছে,

আরো আছে পাঠশালা

কামারের দোকান, চায়ের ঠেক…

উদ্ভিন্ন স্তাবকতা আছে, মুদ্রাজর্জর লোভাতুর,

তুমি চাউনি চেনো।

 

কাজ আছে? বলে যেতে!

আমি হারাতাম না যুদ্ধের প্রান্তর,

সাজাতাম না দাবার ছক,

প্রলুব্ধ করতাম না ভিন বলয়ের সিকান্দারকে।

সহযোদ্ধা! সহমর্মী নও।

 

 

সুখের খবর

 

উন্নাসিকতা তোমাকে মানায়,

ডুবে যাই, ভেসে উঠি

উঠে দেখি উন্নাসিক তুমি

কালজয়ী হয়ে গেছো

কবিতার ছত্রে ছত্রে,

চিত্রকরের ক্যানভাসে ক্যানভাসে।

 

অবাক ভাবতে বসি

খুঁড়ে দেখি ব্যক্তিগত ডাস্টবিন,

সূত্র কোথাও কি ছিল?

এত কাঁটাচেরা, এত ছানবিন,

এত তোলপাড় সুনামির পর?

 

আর তুমি কালজয়ী, তাই উন্নাসিক

সুখের খবর,

আমি চিন্তাশীল, পোস্টট্রুথফুল

সুখের খবর।

 

 

আমি অনাগতবিধাতা

 

আমি এইখানে নেই

এই মাঠে আমি নেই

আমি দেখছিনা কিছু দামাল ছেলের উত্তুঙ্গ ক্রিকেট

এ বাজারে আমি সওদা করিনা

টিপে বা ঘেঁটে  দেখিনা আলু মুলো শাকশব্জি

সন্ধ্যে হলে পথ চেয়ে থাকে চায়ের দোকান

আমি ঝাঁপ তুলিনা। আসিনা।

ভোরের আজানে আমি নেই, কবিসম্মেলনে নেই।

 

রোদ্দুরের পথ বেঁকে যায়

মহাশূন্যে রকেটের গতিপথ

বুলেটের খুঁজে নেয়া বুক

হিমশৈল,  মহাসাগরীয় স্রোত

বেঁকে যায়,

 

বাসস্টপে অপেক্ষারত কেউ

আমি অনাগতবিধাতা।

 

 

তোমরা যাকে ভালোবাসা বলো

 

তোমরা যাকে ভালোবাসা বলো,

অগাধ পেয়েছি জীবনে

আর হারানোর কিছু নেই।

আজকাল যারা ঘৃণা করে

জানেনা ঘৃণা হলো ভালোবাসার

বিকৃত প্রকাশ।

 

ভাত খেতে ভয় পাইনি কখনো,

দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হইনি

কিন্তু সিগারেটের ব্র্যান্ড

চেঞ্জ করলেই অহেতুক ভয় এসে চেপে বসে,

যদি ওরা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়

 

 

স্বর্গরথ

 

নিহিত পাতালের নীচে

আছে আরো এক সিঁড়ি

তর তর নেমে যাই আমি

তুমি বাড়িয়ে রাখো তুষ্ণী হাত।

 

পরম বিশ্বাসে রেখে গেছে সে

জমিজিরেত, বৃষ, মৃগনাভি,

বিশ্বাস।

নিহিত পাতালে নেমে গেছে

স্মিতমুখ হাসি নিয়ে।

 

তারপর একদিন হতে পারে

স্বর্গদর্শণ,

মহিয়সী, এলচা বেলচা কত কবিতা

লেখা তো ছিল!

এই ছিল, এই আছে, আর কিছু নেই।

 

কৃচ্ছসাধন সেরে স্বর্গের আলপথ মাড়িয়ে

পৃথিবীতে নামে ভোগদাস,

যেন নিউটনের আপেল।

 

 

শিবির থেকে

 

ধর, ধরে নিয়ে গেছে চাবুকের ল্যাজে

তোমার বিছানা থেকে টোপাকুল পেড়ে

হর্ম্যে আলো পড়ে আছে নিরালা বাতাস

শহরে পুরুষ নেই ফুল ফোটাবার।

 

পরিব্রাজিকা হয়েছ সময় সন্দর্ভে

আঙুল তুলেছে আজ গর্ভের জাতক

বামহাতে ডানহাতে কত তুষ্ণীভাব!

শহরে নারীও নেই কলঙ্ক ঢাকার।

 

নন্দনকানন এক গোমতীর তীরে

মৃগনয়না জীবন তোমাকে স্বাগত

শহরের সমাবেশ পাতার কুটিরে

উদ্বাস্তু জানালা বেয়ে আলো আর গান।

 

শিয়রে শার্দুল জাগে রাত ঘন হলে

রাষ্ট্র তার খোলা বুকে জড়ায় আমাকে।

Related posts